সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) - জীবনীশক্তি | | NCTB BOOK

সালোকসংশ্লেষণ একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। 1905 সালে ইংরেজ শারীরতত্ত্ববিদ ব্ল‍্যাকম্যান (Blackman) এ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন। পর্যায় দুটি হলো, আলোকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) এবং আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় (Light independent phase)।

চিত্র 4.03: একটি পত্ররন্দ্র বা স্টোমা

(a) আলোকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) 

আলোকনির্ভর পর্যায়ের জন্য আলো অপরিহার্য। এ পর্যায়ে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট), NADPH (বিজরিত নিকোটিনামাইড অ্যাডনিন ডাইনিউক্লিওটাইড ফসফেট) এবং H' (হাইড্রোজেন আয়ন বা প্রোটন) উৎপন্ন হয়। আলোর ফোটন কণা থেকে রূপান্তরিত এই শক্তি ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন এর মাধ্যমে সঞ্চিত হয় ATP অণুর ফসফেট গ্রুপের রাসায়নিক বন্ধনশক্তি হিসেবে। এই বিক্রিয়ায় ক্লোরোফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্লোরোফিল অণু আলোকরশ্মির ফোটন (photon) শোষণ করে এবং শোষণকৃত ফোটন থেকে শক্তি সঞ্চয় করে ADP (অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট) অজৈব ফসফেট (Pl - inorganic phosphate)-এর সাথে মিলিত হয়ে ATP তৈরি করে। ATP তৈরির এই প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন (photophosphorylation) বলে। 

সূর্যালোক এবং ক্লোরোফিলের সাহায্যে পানি বিয়োজিত হয়ে অক্সিজেন, প্রোটন/হাইড্রোজেন আয়ন ও ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়াকে পানির ফটোলাইসিস (photolysis) বলা হয়।

 

(b) আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় বা অন্ধকার পর্যায় (Light independent phase বা dark phase) 

আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে আলোর প্রত্যক্ষ প্রয়োজন পড়ে না, তবে আলোর উপস্থিতিতেও এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। বায়ুমণ্ডলের CO₂ পত্ররন্দ্রের মধ্য দিয়ে কোষে প্রবেশ করে। আলোক পর্যায়ে তৈরি ATP, NADPH এবং H+ এর সাহায্যে আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে CO₂ বিজরিত হয়ে কার্বোহাইড্রেটে পরিণত হয়। সবুজ উদ্ভিদে CO₂ বিজারণের তিনটি গতিপথ শনাক্ত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ক্যালভিন চক্র, হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র এবং ক্রেসুলেসিয়ান এসিড বিপাক (Crassulacean Acid Metabolism বা CAM) এদের মধ্যে প্রথম দুটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা দেওয়া হলো।

চিত্র 4.04: C, উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের দুটি ধাপ- আলোকনির্ভর পর্যায় ও ক্যালভিন চক্র

(i) ক্যালভিন চক্র বা C3 গতিপথ (Calvin cycle বা C3 cycle): CO2 আত্তীকরণের এ পতিপথকে আবিষ্কারকদের নামানুসারে ক্যালভিন-বেনসন ও ব্যাশাম চক্র বা সংক্ষেপে ক্যালভিন চক্র বলা হয়। ক্যালভিন তার এ আবিষ্কারের জন্য 1961 সালে নোবেল পুরস্কার পান। অধিকাংশ উদ্ভিদে এই প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরি হয়। এর প্রথম স্থায়ী পদার্থ ও-কার্বনবিশিষ্ট ফসফোগ্লিসারিক এসিড, সেজন্য এ ধরনের গতিপথকে C3 গতিপথ এবং যেসব উদ্ভিদে এই চক্র সম্পন্ন হয় তাদেরকে  C3উদ্ভিদ বলে।

(ii) হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র বা C4 গতিপথ (Hatch and Slack cycle বা C4cycle): অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী M.D. Hatch ও C.R. Slack (1966 সালে)CO2 বিজারণের আর একটি গতিপথ আবিষ্কার করেন। এই পতিপথের প্রথম স্থায়ী পদার্থ হলো 4-কার্বনবিশিষ্ট অক্সালো এসিটিক এসিড, সেজন্য একেC4গতিপথ এবং যেসব উদ্ভিদে এই চক্র সম্পন্ন হয় তাদেরকে C4উদ্ভিদ বলে।

C4উদ্ভিদে একই সাথে হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র এবং ক্যালভিন চক্র পরিচালিত হতে দেখা যায়।C4 উদ্ভিদের তুলনায় C4 উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের হার বেশি এবং উৎপাদন ক্ষমতাও বেশি। সাধারণত ভুট্টা, আখ, অন্যান্য ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ, মুথা ঘাস, নটে গাছ (Amaranthus) ইত্যাদি উদ্ভিদেC4পরিচালিত হয়।

 

 

 

Content added By
Promotion